গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলায় বুধবার রাত থেকে টানা মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। সঙ্গে বইছে দমকা হাওয়া। এ কারণে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে গিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে পড়েছে লোকালয়ে। ইতিমধ্যে প্লাবিত হয়েছে একাধিক গ্রাম, পানিবন্দী হয়ে পড়েছে হাজারো মানুষ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গলাচিপা পৌরসভার ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বেড়িবাঁধের বাইরের এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। প্রায় আড়াই হাজার পরিবার এখন পানিবন্দী অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অনেক বাড়িতে পানি ঢুকে পড়ায় চুলা পর্যন্ত জ্বলছে না, বন্ধ দুপুরের খাবার রান্না। কুটিয়ালপাড়ার ব্যবসায়ীদের মজুতকৃত ধান, ডাল ও বাদাম পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে। পৌর শহরের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের নিম্নাঞ্চল বৃষ্টির পানিতে ডুবে গেছে।
নদী বেষ্টিত এই উপজেলার প্রধান যোগাযোগ মাধ্যম হলো ফেরি। কিন্তু জোয়ারের পানি ফেরির জেটি তলিয়ে যাওয়ায় পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। ফলে উপজেলার সাথে সারা দেশের যোগাযোগ কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
পানপট্টি ইউনিয়নের ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডে পানপট্টি বোর্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংলগ্ন এলাকায় ৫৫/৩ নম্বর পোল্ডারের প্রায় ১০-১৫ ফুট বেড়িবাঁধ ভেঙে গিয়ে পানি প্রবেশ করেছে লোকালয়ে। এতে বিবির হাওলা, গুপ্তের হাওলা, সুতিরাম ও খরিদা গ্রাম সম্পূর্ণভাবে প্লাবিত হয়েছে।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদ রানা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, আরও ১০-১২টি গ্রাম প্লাবিত হতে পারে। ফলে প্রায় ১৫-২০ হাজার মানুষ চরম আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। লবণাক্ত পানিতে তলিয়ে গেছে ফসলি জমি, পুকুর ও মাছের ঘের।
বেড়িবাঁধবিহীন চর কাজল ইউনিয়নের চর শিবার ধলার চর এলাকায় প্রায় ২০০টি ঘর পানির নিচে তলিয়ে গেছে। বড় চর কাজলের ১, ২, ৩ ও ৪ নম্বর ওয়ার্ডেও প্লাবনে প্রায় ২ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন।
গলাচিপা সদর ইউনিয়নের আগুনমুখা চরের ৬০টি ঘর এবং চর কারফারমার ৯০টি ঘর ডুবে গেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা হালিম মিয়া।
ডাকুয়া, গজালিয়া, কলাগাছিয়া ও নলুয়াবাগীসহ আরও কয়েকটি ইউনিয়নের মানুষ ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কায় রয়েছে। ইতিমধ্যে রতনদী তালতলী ইউনিয়নের মামুনতক্তি গ্রামে একটি বাড়ির উপর চাম্বুল গাছ পড়ে ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে।
গলাচিপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদুল হাসান জানিয়েছেন, ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধ দ্রুত সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. জাফর রানা’র নেতৃত্বে ক্ষতিগ্রস্তদের খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। তিনি আশ্বস্ত করেছেন, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে দ্রুত সহায়তা দেওয়া হবে।